
কুমারখালীর যদুবয়রা ইউনিয়ন
কুমারখালী প্রতিনিধি : আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় হামলা ও মামলার আতঙ্কিত গ্রামবাসী। গ্রেফতার, হামলা ও লুটপাটের ভয়ে তাঁরা জান, মালামাল, আসবাবপত্র ও গোবাদিপশু নিয়ে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্রে চলে যাচ্ছেন। অনেকটা সুনসান ও থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের উত্তর চাঁদপুর গ্রামে।
এসকল ঘটনায় থানায় দুইটি পৃথক মামলা হয়েছে। অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান দেশীয় অস্ত্র ঢাল, সরকি, হাসুয়া জব্দ করেছে পুলিশ। এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের টহল অব্যাহত রয়েছে।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ভয়ে উত্তর চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা নেমে এসেছে প্রায় এক-চতুয়াংশে। স্থবির হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক পাঠদান ও কার্যক্রম। ২১৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) মাত্র ৬৬ জন উপস্থিত ছিলো। গত সোমবার এসংখ্যা ছিল মাত্র ৫৩ জন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, আগামী ৯ এপ্রিল উত্তর চাঁদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভোট হওয়ার কথা। ভোট কেন্দ্র করে স্থানীয় দু’পক্ষের নেতাকর্মীরা আধিপত্য বিস্তার করতে দফায় দফায় হামলা চালাচ্ছে, পাল্টাপাল্টি মামলা করেছে নেতারা, ভয়ে অনেকেই মালামালসহ গ্রাম ছাড়ছে। এলাকায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় ভয়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১ টার দিকে সরেজমিন উত্তর চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, সুনসান বিদ্যালয় প্রাঙ্গন। সেসময় প্রাক প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস চলছিল। প্রাক প্রাথমিকে ৩৬ জনের পরিবর্তে মাত্র ১১ জন ও প্রথম শ্রেণিতে ২৯ জনের পরিবর্তে ৯ জন এবং দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৩৪ জনের পরিবর্তে ১৩ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে।
এসময় কথা হয় সহকারী শিক্ষক রূপালি সুলতানার সাথে। তিনি বলেন, স্কুল ভোট নিয়ে গ্রামে দু’পক্ষের ঝামেলা চলছে। মানুষ আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। ভয়ে শিক্ষার্থীরাও বিদ্যালয়ে আসেনা। গত সোমবার প্রাক প্রাথমিকে ৪ জন, প্রথম শ্রেণিতে ৭ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১২ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৮ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ১০ জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে মাত্র ১২ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলো।
এবিষয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী জুবায়েদা খাতুন বলে, গ্রামে মারামারি হয়েছে। পুলিশ ছুটাছুটি করছে। তাই অনেকে স্কুলে আসেনি।
জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. রুনা আক্তার বলেন, স্কুল ভোট নিয়ে দুই গ্রুপের নেতাদের বিরোধ চলছে। কয়েকদিন ধরে ঢাল-সরকি নিয়ে দাবড়া-দাবড়ি চলছে। অনেকের নামেই মামলা হয়েছে। মানুষ বাচ্চা- কাচ্চা, মালামাল, গরু-ছাগল নিয়ে পালিয়ে গেছে। সেজন্য বিদ্যালয়ে উপস্থিতির সখ্যা কম।
তিনি আরো বলেন,এলাকায় মারামারি হলেই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা আসা বন্ধ করে দেয়। তাঁর দাবি, প্রশাসনিকভাবে উদ্যোগ নিয়ে এলাকায় শান্তি ফেরাতে হবে এবং শিক্ষার মানসম্মত পরিবেশ বজায় রাখতে হবে।
দুপুরে উত্তর চাঁদপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, প্রায় পুরুষ শূণ্য গ্রাম। হামলার ভয়ে গোবাদিপশু, টিভি, ফ্রিজ, আসবাবপত্র নিয়ে অন্যত্রে চলে যাচ্ছে মানুষ। এসময় কথা হয় মোছা. শাহানা খাতুনের সাথে। তিনি বলেন, সেখানে তাঁর মেয়ে জামায় বাড়ি। সম্প্রতি তাঁর মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন তিনি। হামলা ও লুটপাটের ভয়ে সকল মালামাল তাঁর নিজবাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি একটি নির্মাণাধীন সড়কের নারিকেল গাছের ডাব খাওয়া ও বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ নির্বাচন ঘিরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে যদুবয়রা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সবুজ আলী ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি আকাশ রেজার সমর্থক ও নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এনিয়ে গত সোমবার উভয়পক্ষ থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা করেছেন। মামলায় গ্রেফতার, হামলা ও লুটপাটের ভয়ে পালিয়ে গেছেন অনেকেই।
এবিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা আকাশ রেজা বলেন, এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। প্রতিপক্ষরা তাঁদের ফাঁসাতে মালামাল, গরু- বাছুর সরিয়ে নিচ্ছে। তাঁর ভাষ্য, ঘটনা এখন স্কুল ভোটে মোড় নিচ্ছে। ভোট বন্ধ না হলে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরো অবনতি হতে পারে।
অপরদিকে আওয়ামী লীগ নেতা তৌহিদুল ইসলাম বলেন, কিছু মানুষ আতঙ্কে গ্রাম ছাড়ছে। তবে এলাকার পরিস্থিতি এখন ভাল আছে। ভোট নিয়ে কোনো সমস্যা হবেনা।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দলীয় ক্রোন্দলে সেখানে থমথমে পরিবেশ। ভয়ে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসছে না। তবে শিক্ষকরা নিয়মিতই বিদ্যালয়ে থাকছে।
থানার ওসি মোহসীন হোসাইন বলেন, পুলিশ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে। অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে বিপুল পরিমান দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। কিছু মানুষ ভয়ে মালামাল নিয়ে অন্যত্রে চলে যাচ্ছে। সেখানে খুব দ্রুত শান্তি সমাবেশ করা হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা ও নির্বাচনের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কাজী এজাজ কায়সার বলেন, একগ্রুপ ভোট বন্ধের জন্য লিখিত অভিযোগ দিয়েছে,অন্য গ্রুপ ভোটের দাবি করছে। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখার কথা জানালেন তিনি।