বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৪০ পূর্বাহ্ন
নোটিশ
কুষ্টিয়ায় রেডিমেড কাপড়ে ঝোঁক মানুষের,দর্জিপাড়ায় মন্দা
/ ৯৭
প্রকাশিত সময় : বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২৩, ৫:৫৫ অপরাহ্ন

নিজস্ব প্রতিনিধি: আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে অনেকটায় ব্যস্ততা বেড়েছে কুষ্টিয়ার দর্জিপাড়ায়। তবে গেল কয়েকবছর ধরে দর্জিপাড়ায় নেই সেই চিরচেনা ব্যস্ততা। সেখানে দর্জি দোকানের সংখ্যা বাড়লেও বাড়ছে না দর্জির সংখ্যা। অনেকেই আবার পেশা বদলে চলে যাচ্ছেন অন্যপেশায়।
দর্জিরা বলছেন, গার্মেন্টস শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। অল্পমূল্যে বাজারে তৈরিকৃত পোশাকের সয়লাব। দর্জিদের সম্মানী ও সম্মান কম। নামমাত্র মূল্যে ঘরেঘরে একাজ করছেন মহিলা দর্জিরা। এসব কারণে দিনে দিনে দর্জিপাড়ায় কমে যাচ্ছে ব্যস্ততা। তাঁরা বলছেন, নতুন করে একাজ শেখার লোকও পাওয়া যাচ্ছেনা। অনেক দর্জিই আবার পেশা বদল করে অন্যপেশায় যোগদান করছেন। কেউ চলে যাচ্ছেন প্রবাসে।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দর্জিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যেকোনো উৎসব বা ঈদে মানুষ সাধারনত দুই ধরনের পোশাক পছন্দ করে। একটা হল রেডিমেড বা তৈরিকৃত পোশাক। আর অন্যটা হল নিজের ইচ্ছেমত ডিজাইন ও রুচিশীল পিচ বা সিট কাপড় কিনে দর্জি দ্বারা বানানো পোশাক।
একটা সময় মানুষ দর্জির কাছ থেকে বানানো পোশাকই বেশি পছন্দ করতেন। তখন দর্জিরা মেশিনে আওয়াজ তুলে রাতভর কাজ করতেন। কিন্তু খরচ কম হওয়ায় করোনালসহ কয়েক বছর ধরে এখানকার মানুষের রেডিমেট (তৈরিকৃত) পোশাকের চাহিদা বেড়েছে। সেজন্য ঈদ কিংবা যেকোনো উৎসবেও দর্জিপাড়া গুলোতে আর চিরচেনা সেই ব্যস্ততার দেখা যায়না। শুধু অফিসিয়াল চাকুরীজীবীরাই বাধ্য হয়ে আসে দর্জির দোকানে।
আরো জানা গেছে, প্রায় ১০ বছর পূর্বে কুমারখালী শহরে ৮ -১০ টি দর্জির দোকানে দলবেঁধে প্রায় ৬০ -৬৫ জন দর্জি কাজ করতেন। কিন্তু বর্তমানে ওই শহরে প্রায় দর্জির দোকান বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮ – ২২টি। দোকান বাড়লেও সেখানে সেতুলনায় বাড়েনি দর্জির সংখ্যা। বর্তমানেও প্রায় ৪৫ -৬০ জন দর্জি কাজ করে। এবছর প্রতিটি প্যান্ট তৈরির মজুরি নেওয়া হচ্ছে ৪৫০ -৫০০ টাকা, জামা তৈরিতে ৩৫০ -৪০০ টাকা, পাঞ্জাবীতে ৪৫০ – ৫৫০ এবং ত্রি -পিচ ও টু – পিচের মজুরি নেওয়া হচ্ছে ২৫০ – ৩০০ টাকা।
এবিষয়ে গত শনিবার দুপুরে কুমারখালী পৌরসভার নিউ ঢাকা ট্রেইলার্সের মাস্টার অমল চন্দ্র শর্মা বলেন, তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে দর্জির কাজ করছেন। দিনেদিনে দর্জির দোকান বাড়লেও দর্জি বাড়তেছে না। একাজ শিখতে সময় লাগে এবং শেখার সময় টাকা পাওয়া যায়না বলে নতুন করে কেউ শিখতেছে না। তাঁর ভাষ্য, বাজারে অল্প টাকায় রেডিমেট পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। শুধু অফিসিয়াল ব্যক্তিরা বাধ্য হয়ে পোশাক বানায়। একাজে সম্মান ও সম্মানি কম। তাই দিনে দিনে কারিগর কমে যাচ্ছে।
ওই ট্রেইলার্সের দর্জি কামাল হোসেন বলেন, বারোমাস পরে শুধু রমজানে কাজের চাপ বাড়ে। এসময় প্রতিদিন তিনি ৩ -৪ টা শার্ট (জামা) বা প্যান্ট তৈরি করছেন। কিন্তু অন্যসময় দিনে একটা – দুইটারও অর্ডার থাকেনা।
শহরের অনুপম ট্রেইলার্সের দর্জি সুভাষ দত্ত বলেন, তাঁর কারখানায় প্রতিবছর ৮ টি মেশিন চলত। এবারো ৮ টি মেশিন রয়েছে কারখানায়। কিন্তু অর্ডার কম থাকায় মাত্র ৪ জন কাজ করছে। তাঁর ভাষ্য, গার্মেন্টস শিল্পের প্রসারের কারণে দর্জিরা অসহায় হয়ে পড়েছে। দর্জিদের মজুরির টাকায় এখন বাজারে তৈরি পোশাক পাওয়া যাচ্ছে।
দর্জি তরিকুল ইসলাম বলেন, এখন ঘরে ঘরে মহিলা দর্জি। তাঁরা কম টাকায় পোশাক তৈরি করছে। ফলে মানুষ দর্জিপাড়ায় কম আসছে। ইনকাম ( আয়) কমে যাওয়ায় অনেকেই পেশা বদল করছেন।
জানা গেছে দর্জি তরিকুল ইসলামের সাথে কাজ করতেন উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের মহেন্দ্রপুর গ্রামের মো. আশরাফুল ইসলাম। তিনি বর্তমানে পেশাবদল করে গরুর খামার করেছেন। তিনি বলেন, সারাবছর কাজ থাকেনা। সংসারের খরচ মেটানো যায়না। গেল করোনায় তাঁর খুব দুর্দিন গেলেও তিনি সরকারি কোনো সহযোগীতা পাননি। তাই তিনি দর্জির কাজ ছেড়ে জমানো টাকা ও ঋণ নিয়ে খামার করেছেন বাড়িতে।
আইডিয়াল ট্রেইলার্সের কাটিং মাস্টার মো. আখতার হোসেন বলেন,২৩ বছর ধরে তিনি দর্জির কাজে সাথে জড়িত। দু’বছর আগে করোনার কারণে তাঁর ব্যবসা মন্দ গেছে। আর এবার নিত্যপণ্যের দাম বেশি। তাই মানুষ পোশাকের চেয়ে অন্যদিকে নজর বেশি দেওয়ায় এবারো তাঁর ব্যবসা মন্দ।
সোমবার বিকেলে যদুবয়রার ইউনিয়নের জয়বাংলা বাজারের দর্জি মিলন হোসেন বলেন, একটু দেরিতে হলেও এবারো কাজের চাপ বেড়েছে। তিনি প্রায় ২০০ টি অর্ডার নিয়েছেন। তবে শহরের তুলনায় গ্রামে কাজের চাপ বেশি কিন্তু মজুরি কম বলে তিনি জানান।
কুমারখালী দর্জি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ২০২১ সালে তিনি একটি সংগঠন করেছেন। উপজেলায় প্রায় ৭০০ -৮০০ জন দর্জি থাকলেও সংগঠনের সাথে আছে মাত্র ১৪০ জন। রেডিমেট পোশাকের কারনে এখন দর্জিদের কাজ কমেছে। উপার্জন কম হওয়ায় নতুন কেউ একাজ শিখতে আগ্রহী নয়। তবে যেকোনো মূল্যে আদিম এপেশাটাকে টিকিয়ে রাখার আহবান জানান তিনি।

 

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরও সংবাদ
ফেসবুক পেজ