বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৫৮ পূর্বাহ্ন
নোটিশ
সাংবাদিক কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের মৃত্যু বার্ষিকী কবে!
/ ৮৪
প্রকাশিত সময় : শনিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৩, ৫:২১ অপরাহ্ন

কুমারখালী প্রতিনিধি: গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ সাংবাদিক কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার আসলে কবে মৃত্যুবরণ বা পরলোকগমন করেছিলেন? এনিয়ে ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার এবং ধুম্রজাল সৃষ্টির অভিযোগ তুলেছেন তাঁর বংশধরেরা। বিভিন্ন ওয়েবসাইড, উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন লেখকদের বইয়ে বলা হচ্ছে ১৮৯৬ সালের ১৬ এপ্রিল (৫ ই বৈশাখ) তিনি পরলোকগমন করেছেনতিনি। প্রশাসনের ওয়েবসাইডও বলছে একই কথা।
কিন্তু কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের চতুর্থ বংশধরেরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁরা বলছেন, ১৮৯৬ সালের ১৮ এপ্রিল এবং বাংলা ১৩০৩ সনের ৫ বৈশাখ তিনি ইহকাল ত্যাগ করে পরলোকগমন করেন। কিন্তু তাঁদের কাছে কোনো লিখিত দলিল বা প্রমাণাদি নেই। উভয়ের মতে বাংলা ৫ বৈশাখ তিনি মৃত্যু করছেন। কিন্তু ইংরেজি তারিখে রয়েছে দুইদিনের গড়মিল।
অপরদিকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌরসভায় অবস্থিত সাংবাদিক কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতিজাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক বলছেন, জাদুঘরের ডকুমেন্টে শুধু মৃত্যুর সাল উল্লেখ আছে, কিন্তু নির্দিষ্ট করে কোনো তারিখ উল্লেখ নেই। কাঙ্গালের বংশধরের দেওয়া মৌখিক তারিখ অনুযায়ী প্রতিবছর সেখানে ১৮ এপ্রিল (৫ বৈশাখ) মৃত্যু বার্ষিকী পালন করা হয়।
শনিবার সকালে সাংবাদিক কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার স্মৃতিজাদুঘর ঘুরেঘুরে দেখা গেছে, সেখানে বিভিন্ন স্থানে তাঁর ছবি ও সংক্ষিপ্ত জীবন ছবি আকাঁরে টাঙানো রয়েছে। ছবির পাশে লেখা আছে ১৮৯৬ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো তারিখ উল্লেখ করা নেই। আরো দেখা গেছে, সেখানে কাঙ্গাল কে নিয়ে বিভিন্ন লেখকদের লেখা বই সংরক্ষণ করা রয়েছে। বই গুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে ১৮৯৬ সালের ১৬ এপ্রিল কাঙ্গাল পরলোকগমন করেছেন। আর উইকিপিডিয়াতে এবং উপজেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইডেও রয়েছে একই তথ্য।
এসময় কথা হয় জাদুঘরের তত্ত্বাবধায়ক ওবাইদুল্লাহ’র সাথে। তিনি বলেন, জাদুঘরের সংরক্ষিত তথ্যে শুধুমাত্র মৃত্যু সাল উল্লেখ আছে। তিনি প্রতিবছরই কাঙ্গাল হরিনাথের বংশধরের মৌখিক দেওয়া তারিখ ১৮ এপ্রিল মৃত্যু বার্ষিকী পালন করেন। কিন্তু সংরক্ষিত বইয়ে কত তারিখ উল্লেখ আছে, তা তিনি খেয়াল করেন নি। সঠিক মৃত্যু তারিখ নির্নয় নিয়ে জাতীয় জাদুঘরের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।
জানতে চাইলে কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের চতুর্থ বংশধর স্বর্গীয় অশোক মজুমদারের স্ত্রী গীতা রাণী মজুমদার বলেন, বাংলা ১৩০৩ সনের ৫ বৈশাখ কাঙ্গাল দেহত্যাগ করেছেন। তাঁরা অক্ষয় তিথি অনুযায়ী হিসেব রাখেন। তা তে ১৮৯৬ সালের ১৮ এপ্রিল মৃত্যু বার্ষিকী হয়। কিন্তু বিভিন্ন মানুষ ১৬ এপ্রিল কাঙ্গালের মৃত্যুবার্ষিকী বানিয়ে ফেলেছে। তাঁর ভাষ্য, কাঙ্গালের মৃত্যু নিয়ে ভুল ও বিভ্রান্তমূলক তথ্য প্রচার করে একটা ধুম্রজাল সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি ওয়েবসাইড সহ সকল স্থানের ভুল তারিখটা সংশোধনের দাবি জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিতান কুমার মন্ডল বলেন, বংশধরের বিষয়টা অনুস্বরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। তবে সঠিক তারিখটি ক্ষতিয়ে দেখার কথা জানালেন তিনি।
উল্লেখ্য যে, সাংবাদিক কাঙাল হরিনাথ মজুমদারকে বলা হয় গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ। তিনি ১৮৩৩ সালের ২০ জুলাই নদীয়া জেলার (বর্তমান কুষ্টিয়া) কুমারখালী উপজেলার কুন্ডুপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। জানা গেছে, গানে ‘কাঙাল’ নামে ভণিতা করতেন বলে এক সময় কাঙাল শব্দটি তার নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। তিনি (১৮৩৩-১৮৯৬) সাংবাদিক, সাহিত্যিক, বাউল গান রচয়িতা। তাঁর প্রকৃত নাম হরিনাথ মজুমদার, কিন্তু কাঙ্গাল হরিনাথ নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। কাঙ্গাল ফিকিরচাঁদ বা ফিকিরচাঁদ বাউল নামেও তিনি পরিচিত ছিলেন।
গ্রামের সাধারণ মানুষের উন্নতির জন্য এবং তাদের শোষণ-পীড়নের বিরুদ্ধে হরিনাথ সারাজীবন আন্দোলন করেছেন। অত্যাচারিত এবং অসহায় কৃষক সম্প্রদায়কে রক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি সাংবাদিকতা পেশা গ্রহণ করেন। প্রথমে তিনি সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় লিখতেন, পরে ১৮৬৩ সালে তিনি নিজেই গ্রামবার্তা প্রকাশিকা নামে একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। পত্রিকাটি পরে পাক্ষিক ও শেষে এক পয়সা মূল্যের সাপ্তাহিকে পরিণত হয়। এতে সাহিত্য, দর্শন ও বিজ্ঞানবিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হলেও কৃষকদের প্রতি তখনকার নীলকর ও জমিদারদের শোষণ-অত্যাচারের কথা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করা হতো। ফলে ব্রিটিশ সরকার এবং স্থানীয় জমিদারদের পক্ষ থেকে তাকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়। কিন্তু তিনি নির্ভীকভাবে তাঁর দায়িত্ব পালন করে যান।
এসব কারণে পত্রিকাটি তখন বিশেষ খ্যাতি অর্জন করে। হরিনাথের জীবনে কখনও সচ্ছলতা ছিল না, কিন্তু তা সত্ত্বেও পত্রিকা প্রকাশের সুবিধার্থে তিনি ১৮৭৩ সালে একটি ছাপাখানা স্থাপন করেন। রাজশাহীর রাণী স্বর্ণকুমারী দেবীর অর্থানুকূল্যে দীর্ঘ ১৮ বছর পত্রিকা প্রকাশের পর আর্থিক কারণে এবং সরকারের মুদ্রণ শাসনব্যবস্থার কারণে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ করে দিতে হয়।

 

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরও সংবাদ
ফেসবুক পেজ