বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:১৪ পূর্বাহ্ন
নোটিশ
জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে আলেমদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
/ ৮
প্রকাশিত সময় : সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৩, ৫:০৯ অপরাহ্ন

এনএনবি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মসজিদে খুৎবা পড়ার সময় জঙ্গিবাদ, মাদক, দুর্নীতি এবং নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতে দেশের আলেম, উলেমা এবং খতিবদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ আলেম, উলেমা, খতিব এবং ইমামদের শ্রদ্ধা করে। তাই আপনাদের কথাবার্তা বা আলাপ-আলোচনা তাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রধানমন্ত্রী সোমবার তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে চতুর্থ ধাপে দেশজুড়ে ৫০টি মডেল মাদ্রাসা ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি মসজিদে বয়ানের সময় নারীর প্রতি সহিংসতা দূরীকরন, জঙ্গিবাদ, গুজব, অপপ্রচার, গৃহকর্মীদের প্রতি অমানবিক আচরণ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে বেশি বেশি আলোচনা করেন জনগণ তা গ্রহণ করবে।’
শেখ হাসিনা বিশেষ করে জুমা’র নামাজের পূর্বে খুৎবা পাঠে এসব বিষয়গুলো আলোচনা করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সম্প্রীতি বজায় রেখে প্রত্যেকে যার যার ধর্ম পালন করবেন, এমনটা প্রত্যাশা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘অন্য ধর্মের প্রতি আমাদের সহনশীল আচরণ করতে হবে। আমাদের এই ভূখ-ে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবারই সমান অধিকার আছে যার যার ধর্ম পালন করার। কাজেই অন্যের ধর্মে আঘাত দেওয়া মোটেই সমীচীন নয়। ইসলাম আমাদের সেই শিক্ষা দেয়নি। সেই কথাটি আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান ও মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলা ও সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলাকে যুক্ত করা হয় এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতা, সরকারি কর্মকর্তা, আলেম-ওলামাসহ সাধারণ মানুষ এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন।
পবিত্র ইসলাম ধর্মকে কেউ যেন কলুষিত কতে না পারেÑ বক্তব্যকালে সেদিকে ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও আলেম-ওলামাদের দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কিছু লোকÑ যারা সন্ত্রাস বা জঙ্গীবাদী কর্মকা- করে আমাদের শান্তির ধর্মটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং বিপথে চলে যায়। এটা যাতে না হয় সেদিকে আমাদের সকলের বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। আমাদের দেশের মানুষ ইসলামিক ভাবধারা নিয়ে তৈরি হবেন; যেন আদর্শ ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠেন সেদিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মানুষের জীবন কেড়ে নেয়। মানুষকে বিভ্রান্ত করে। এখান থেকে মানুষকে দূরে রাখার ব্যবস্থা অবশ্যই নিতে হবে।’
ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসারে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ধর্মের প্রতি অত্যন্ত নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। ইসলাম ধর্মের মর্মবাণী যেন দেশের মানুষ উপলব্ধি করতে পারেন সেই ব্যবস্থা করেছিলেন। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইসলাম ধর্মের সঠিক প্রচার ও প্রসারে কাজ করছি।’
মডেল মসজিদ নির্মাণে সরকারের উদ্দেশ্য বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২১ সালে প্রথম পর্যায়ে ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করি। ইসলাম ধর্মে সঠিক চর্চাটা যাতে হয় এবং ইসলাম ধর্মের মর্মবাণীটা মানুষ যাতে সঠিকভাবে জানতে, বুঝতে ও গ্রহণ করতে পারে সেই লক্ষ্যে এটা করা হয়েছে। এই মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের নামাজের ব্যবস্থা, ধর্মীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। দ্বীনি দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধাদি সৃষ্টি। বিশেষ করে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ এবং সরকারের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার নীতি নির্ধারণী বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি আমাদের লক্ষ্য।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম। কিছু লোক যারা সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদী কর্মকা- করে আমাদের শান্তির ধর্মটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং বিপথে চলে যায়। এটা যাতে না হয় সেদিকে আমাদের সকলের বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।
মডেল মসজিদের সুবিধাদির কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, ‘নারীদের জন্য এখানে আলাদা নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিবন্ধীরাও যাতে করে যেতে পারেন, সেজন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোরআন চর্চার জন্য হেফজখানা, হজ্বাযাত্রী ও ইমামদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং জ্ঞান চর্চায় ইসলামিক লাইব্রেরির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পৃথক কমপ্লেক্সে ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে থাকবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জেলা উপজেলা পর্যায়ের অফিস কনফারেন্স হল বই বিক্রয় কেন্দ্র, গবেষণা কক্ষ, প্রতিবন্ধী কর্নার, হজযাত্রীদের প্রাক নিবন্ধন কেন্দ্র ও দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আবাসনের সুব্যবস্থা এই মসজিদে রাখা হয়েছে।’
ইসলাম ধর্মের প্রচার-প্রসারে ইসলামিক শিক্ষা আরও যাতে উন্নত ধরনের হয়, সরকার সেই ব্যবস্থা নিয়েছে উল্লেখে করে সরকার প্রধান বলেন, ‘মাদ্রাসা শিক্ষাকে অনেকে অবহেলার চোখে দেখতেন। আমরা এটার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা ডিজিটাল কোরআন শরীফ করে দিয়েছি। ইন্টারনেটের মানুষ এটা শুনতে পারবে।’ হাওড় অঞ্চলে একটি বিশেষ প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে ইমামদের খুতবাভাতা প্রদান করা হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমাদের কোমলমতি ছেলেদের বিভ্রান্তির পথে নিয়ে যাওয়া হয়। কেউ যেন সেদিকে নিতে না পারে। তারা যেন জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়। ইসলাম যে শান্তির ধর্ম, মানুষ খুন করলে কখনও বেহেস্তে যাওয়া যায় না, নিরীহ মানুষকে খুন করলে বরং দোজখের আগুনে পুড়তে হয়; মানুষের মাঝে এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে।’
আলেম-ওলামাদের উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধার চোখে দেখে। আপনাদের কথার গুরুত্ব রয়েছে। আমাদের যেসব সমস্যা দেখা দিচ্ছে যেমন মাদকাসক্ত, নারীর প্রতি সহিংসতা, জঙ্গিবাদ, অহেতুক মিথ্যা কথা বলে গুজব ছড়ানো, গৃহকর্মী ও অধীনস্তদের প্রতি অমানবিক আচরণ, দুর্নীতি ইত্যাদি সমাজ থেকে দূর করার জন্য মসজিদের খুতবায় এই বিষয়গুলো বেশি করে বোঝালে মানুষ তা গ্রহণ করবে। বিশেষ করে জুমার খুতবায় তুলে ধরা দরকার।’
ইসলাম শান্তির ধর্ম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইসলাম ধর্মে নারীর অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। কাজেই নারীদের প্রতি কোনোরকম সহিংসতা বা অবমাননাকর আচরণ যেন না হয় এবং তাদের অধিকার যাতে সুরক্ষিত থাকে সেদিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়ার অনুরোধ করছি। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের সঙ্গে আর কোনও সন্তান যেন জড়িত হয়ে না পড়ে, সেদিকে নজর নিতে হবে। আমরা জঙ্গিবাদ দমন করেছি। ভবিষ্যতে এটা অব্যাহত রাখতে পারবো ইনশাল্লাহ।’
বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অন্য ধর্মের প্রতি আমাদের সহনশীল আচরণ করতে হবে। ইসলাম ধর্ম আমাদের সেটাই শেখায়। আমরা যদি বিশ্বাস করি, এই বিশ্ব আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সৃষ্টি করেছেন, তার হুকুম ছাড়া গাছের পাতাটিও নড়ে না। কাজেই এখানে অন্যান্য ধর্ম; যা কিছু আছে সবই তো আল্লাহরই সৃষ্টি। তিনি ভালোমন্দ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কিছু করেছেন। আমাদের এই ভূখ-ে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও বর্ণের যারা বসবাস করেন, সবারই সমান অধিকারে আছে, যার যার ধর্ম পালন করার। কাজেই অন্যের ধর্মে আঘাত দেয়া মোটেই সমীচীন নয়। ইসলাম আমাদের সেই শিক্ষা দেয়নি। ইসলাম মানবতার ধর্ম, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম। সেই কথাটি আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে।’
কোরআনে বলা হয়েছে দ্বীন গ্রহণে কোনও জবরদস্তি নেই বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জবরদস্তি করে কোনও কিছু করা নয়। ধর্মের ভালো কথাগুলো বলেই ধর্মপ্রাণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। আমার ধর্মগ্রহণে ও লালনপালন করতে। এটা পালন করে নিজেরা ভালো থাকা যায় সেটা জানাতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘কে ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে, কে করে না; এটা আমরা কেউ বলতে পারবো না। শেষ বিচার করবেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, মাঝে মাঝে আমরা যখন দেখি কিছু মানুষ অহেতুক অন্য ধর্ম অথবা আমাদের ইসলাম ধর্মে হয়তো অন্য মতাবলম্বীদের ওপর আঘাত হানে। যেটা সম্পূর্ণভাবে নবী (সা.) ও কোরআনের চিন্তার পরিপন্থী। কাজেই এ ধরনের আচরণ যেন কেউ না করেন। আল্লাহর উপরে বিশ্বাস যেন কেউ না হারান। আপনি বিচার করতে গেলে তো আল্লাহর ওপর বিশ্বাস হারাচ্ছেন। বিচার তো আল্লাহ করবেন। সেই বিশ্বাস নিয়ে আমাদের চলতে হবে। যার যার যে ধর্ম, সে সেটা পালন করবে।’
দেশবাসীদর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের পবিত্র ধর্মটাকে কেউ যেন অন্যভাবে কলুষিত কতে না পারেন; ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও আলেমওলামারা এদিকে দৃষ্টি দেবেন সেটাই চাই। আমরা সততা নিয়ে কাজ করছি বলেই আল্লাহ আমাদের সহায় হয়েছেন। দারিদ্রের হার কমিয়ে আনতে পেরেছি। কেউ অতিদরিদ্র থাকবে না।’
বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা যে দামে বিদ্যুত উৎপাদন করছি। তার অর্ধেক দামে বিদ্যুৎ দিচ্ছি। আমরা এখানে ভর্তুকি দিচ্ছি। এখানে দীর্ঘদিন এই ভর্তুকি দেওয়া সম্ভব নয়। এ বিষয়টি সবাইকে মাথায় রাখতে হবে।’

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরও সংবাদ
ফেসবুক পেজ