বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:২৭ পূর্বাহ্ন
নোটিশ
ডেঙ্গুর টিকার কথা ভাবতে হবে
/ ৬
প্রকাশিত সময় : সোমবার, ২১ আগস্ট, ২০২৩, ৪:৫১ অপরাহ্ন

ডেঙ্গু পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের সংকট প্রকট। প্রতিদিন মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে আসছে। ডেঙ্গু এখন আর শুধু ঢাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, ঢাকার বাইরেও তা ছড়িয়ে পড়েছে। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব প্রতি বছরই দেখা দিচ্ছে এবং প্রতিবারই মারাত্মক আকার ধারণ করছে। এমতাবস্থায় ভ্যাকসিনের বিষয়টি সামনে আসছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ মোকাবিলায় মশা নিধনের পাশাপাশি ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন প্রয়োগে মনোনিবেশ এবং এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নীতিনির্ধারকদের তাগিদ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে বিশ্বের প্রায় ২০টি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের টিকা অনুমোদন পেয়েছে। টিকাগুলোর ডেঙ্গু প্রতিরোধ সক্ষমতা ৮০ শতাংশের উপরে। ৯০ শতাংশ টিকাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। বাংলাদেশ দেশগুলো পর্যবেক্ষণে রেখেছে। গবেষকরা বহু বছর ধরে ডেঙ্গু ভাইরাসের বিরুদ্ধে একটি কার্যকর টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। ২০১৯ সালে বিখ্যাত ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি সানোফির আবিষ্কৃত ডেনভ্যাক্সিয়া নামক একটি ডেঙ্গু টিকা যুক্তরাষ্ট্রের ফুড এন্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অনুমোদন লাভ করে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ২০ ডেঙ্গুপ্রবণ দেশে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যদিকে জাপানের তৈরি কিউডেঙ্গা সবচেয়ে বেশি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে ডেন-২ সেরোটাইপের বিরুদ্ধে। সুতরাং এদিক থেকেও টিকাটি অন্য টিকার চাইতে এগিয়ে আছে। কিউডেঙ্গা টিকা ইতোমধ্যে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে এবং নরওয়ে, আইসল্যান্ড, লিচেনস্টাইন, ব্রাজিল, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোতে অনুমোদন পেয়েছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে টিকার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে বাংলাদেশেও এই টিকা দুটি মানবদেহে একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করা উচিত। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেলেই বাংলাদেশও টিকার বিষয়ে সিদ্ধান্তে যেতে পারে। বিভিন্ন দেশে এসব টিকা প্রয়োগের পর কেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে তা বিবেচনা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বাংলাদেশও সংস্থাটির পরামর্শের অপেক্ষায় রয়েছে। টিকাবিষয়ক জাতীয় কমিটি ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কয়েকটি বৈঠক করেছে। গত ৮ আগস্ট সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ডেঙ্গু টিকা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হলেও এখনো ডেঙ্গুর টিকার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে না। টিকার জন্য আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে। যেসব দেশ টিকা তৈরি করে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। যখনই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোনো টিকার অনুমোদন দেবে, তখনই সরকার ব্যবস্থা নেবে। আশা করছি দ্রুততম সময়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবে সরকার। কারণ ডেঙ্গুর ধরন ও প্রকৃতির নানা রকম পরিবর্তন ঘটেছে, বেড়েছে সংক্রমণের ঝুঁকি ও মৃত্যুর হার। জলবায়ুগত বিবেচনায় প্রথম দিকে বৃষ্টি, আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বংশবৃদ্ধির মূল কারণ বলা হলেও পরবর্তী সময়ে অপরিকল্পিত নগরায়ণকে অন্যতম উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কালের পরিক্রমায় ডেঙ্গু সংক্রমণের সময়েরও পরিবর্তন ঘটেছে। ঋতুভেদে বাংলাদেশে ডেঙ্গু সংক্রমণের জন্য বর্ষাকাল (জুন-সেপ্টেম্বর), বর্ষা-পরবর্তী সময় (অক্টোবর-নভেম্বর) এবং বিশেষ করে সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু সংক্রমণের মাস হিসেবে তথ্য-উপাত্তে উল্লেখ রয়েছে। সামনের দিনগুলো আরো কঠিন হবে। আমরা দেখছি, প্রতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। এমতাবস্থায় টিকার বিষয়টি সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় নেয়া উচিত।

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরও সংবাদ
ফেসবুক পেজ