বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৪৩ পূর্বাহ্ন
নোটিশ
“বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর”
/ ৫৯
প্রকাশিত সময় : বুধবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৩, ৩:১৮ অপরাহ্ন
নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের “নারী” কবিতার এই দুই লাইন রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। যদিও বাংলাদেশের নারী কি সবক্ষেত্রে পুরুষের মত সমান সুযোগ পাচ্ছে? আমাদের দেশ থেকে কি নারী পুরুষের সকল বৈষম্য দূর হয়ে গেছে? আমার মনে হয় এদেশের নারীদের দিকে এসব প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাবে। হ্যাঁ, এ কথা অনস্বীকার্য যে বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশ নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা, নারী পুরুষ সমতা স্থাপনসহ নারীদের অগ্রযাত্রার সূচকে অনেক উন্নতি করেছে।
গেলো দশ বছরে অর্থনৈতিক অগ্রগতির পাশাপাশি বাংলাদেশে নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন সামাজিক সূচকেও আশাপ্রদ অগ্রগতি হয়েছে। মেয়েদের জন্য প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত উপবৃত্তির ব্যবস্থা চালু করায় বর্তমানে বিদ্যালয়ে মেয়েদের ভর্তির হার অনেকাংশে বেড়েছে।
নারীদের অধিকার সুরক্ষায় নারীর ক্ষমতায়নও খুব গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেকখানি এগিয়েছে। বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের যে বিশ্বজোড়া সুনাম তার সিংহভাগ কৃতিত্ব এসেছে আমাদের নারীদের হাত ধরে। আজকে নারীদের বিচরণসবখানে। দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, জাতীয় সংসদের স্পীকার সবাই নারী। সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, প্রশাসন, স্বাস্থ্যখাত- সব জায়গায় আজ নারীদের স্বদর্প পদচারণা। নারীদের ঘরের বাইরে চলাফেরা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা নারীর অগ্রযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক।
নারীরা এভাবে অগ্রযাত্রার অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে আসলেও তারা যে সম্পূর্ণ অধিকার বুঝে পেয়েছে সেটি বলার মত অবস্থা কিন্তু আমরা এখনও তৈরী করতে পারিনি। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেক অংশ যেখানে নারী, সেখানে কিছু নারীর উজ্জ্বল অবস্থান গোটা নারীসমাজের অধঃস্তন অবস্থার গ্লানি ঘোচাতে পারে না। এ অবস্থায় যত দ্রুত পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে, আমাদের জন্য ততই মঙ্গল।
বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সব ক্ষেত্রে নারীর সমান অধিকার পাওয়ার কথা। তবে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশে গত ৫০ বছরেও সংবিধানের এ অঙ্গীকার আমরা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। নারী এখনও পদে পদে বৈষম্যের শিকার, তার চলার পথে পদে পদে বাধা।
এখনও এ দেশের নারীরা পারিবারিক নির্যাতন, ধর্ষণ ও শ্রম বৈষম্যের মত ঘটনার শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। নারীদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ ও চলাফেরার শতভাগ সুযোগ তৈরী করতে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্র। এই পরিস্থিতির জন্য প্রধানত দায়ি পুরুষতান্ত্রিক মানষিকতা। আমাদের সমাজে এখনও পুরুষের প্রাধান্য কদর্যভাবে প্রকট। কন্যাসন্তান জন্ম নিলে এখনও সিংহভাগ পরিবারে বিষাদের কালো ছায়া নেমে আসে।
তবে এটা সত্যি যে নারী নির্যাতন ঠেকাতে দেশে সময়োপযোগি আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বেশিরভাগ ঘটনায় মামলাও হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনেক আসামি গ্রেফতারও হচ্ছে। অনেকে শাস্তিও পাচ্ছে। তারপরও নারী নির্যাতনের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমছেনা।
একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য মতে, ২০২২ সালে দেশে ৯ হাজার ৭৬৪ জন নারী সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪ হাজার ৩৬০ ও ধর্ষণ পরবর্তী হত্যার শিকার হন ৪৫০ জন। আর দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৪০ জন। যৌতুকের কারণে মারধর করা হয়েছে ২ হাজার ৬৭৫ জনকে এবং যৌতুক না পেয়ে হত্যা করা হয়েছে ১৫৫ জনকে। অপহরণ করা হয়েছে ১ হাজার ৮৭০ জনকে। এ সকল বিষয়ে ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মোট ১৭ হাজার ২৭টি মামলা হয়েছে।  অনেক ক্ষেত্রে নারী নির্যাতনের আইনগত প্রতিকার চাইতে গিয়ে কোমলমতি নারীরা নানাভাবে হয়রানি ও নিগৃহীত হচ্ছেন।
এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। কেবল মাত্র আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নারী নির্যাতন বন্ধ ও নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সবার আগে মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে নারী নির্যাতন কমানোর পাশাপাশি নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
লেখক -রূপা দে
নারী অধিকার কর্মী।
আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ বিভাগের আরও সংবাদ
ফেসবুক পেজ