
এনএনবি : গাজায় গত ২৪ ঘন্টায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৭০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় তারা ৪০০ ‘সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে’ আঘাত হেনেছে এবং একই সময়ে হামাসের বেশ কয়েকজন কমান্ডারকে হত্যা করেছে। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী আরও জানায়, হামাস আরও দুই জিম্মিকে মুক্তি দেয়ার পরও গাজায় হামলা বন্ধ করবে না তারা।
ওদিকে, জাতিসংঘ গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর নিরাপদ ব্যবস্থা করে দিতে ইসরাইলকে আহবান জানিয়েছে। জাতিসংঘ কর্মকর্তারা বলছেন, গাজার এক তৃতীয়াংশ হাসপাতাল বিদ্যুৎ, ওষুধ ও কর্মীদের অভাবের কারণে কোনও সেবা দেওয়া যাচ্ছে না, বিশুদ্ধ পানির ঘাটতি গুরুতর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি মুক্তিকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধাদের হামলায় কমপক্ষে ১৪ শ’ জন নিহত এবং ২০৩ জন জিম্মি হওয়ার পর ইসরায়েল এর জবাবে গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে। এরপর থেকে অবিরাম বিমান হামলা চলছে।
ইসরায়েল গাজায় বিদ্যুতের পাশাপাশি খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহও বন্ধ রেখেছে। জাতিসংঘ সেখানকার পরিস্থিতিকে বিপর্যয়কর আখ্যা দিয়েছে। গত শনিবার প্রথম মিশরের রাফাহ সীমান্ত দিয়ে গাজায় সামান্য কিছু ত্রাণ ঢোকে। এই সামান্য ত্রাণকে ‘মহাসাগরে এক ফোঁটা পানির’ সঙ্গেই তুলনা করেছিল জাতিসংঘ।
ইসরায়েলের লাগাতার বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় প্রায় ৫ হাজার ৮০০ মানুষ নিহতের হিসাব দিয়েছে সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
বিবিসি জনায়, গত সোমবার রাতভর গাজা জুড়ে শতাধিক স্থানে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খান ইউনিস এবং রাফাহ সীমান্তের দক্ষিণাঞ্চলে নিহতদের মধ্যে কয়েকজন বাস্তুচ্যুত ছিল, যারা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য গাজার উত্তরাঞ্চল ছেড়ে গিয়েছিল।
নিহতদের মধ্যে গাজার একটি পরিবারের ১৩ জন সদস্য ছিল। পরিবারটি খান ইউনিসের উত্তর-পূর্ব উপকণ্ঠে একটি আবাসিক ভবনে ছিল। ওই এলাকায় মানুষের সংখ্যা ৪ লাখ থেকে ১২ লাখে পৌঁছেছে।
বেঁচে যাওয়া এক গাজাবাসী বলেন, আমরা ঘুমাচ্ছিলাম এবং হঠাৎ এক বড় বিস্ফোরণ ঘটে। আমার পরিবারের সবাই মারা গেছে।
বিবিসি-র সাংবাদিক রুশদি আবু আলউফ বলেন, মঙ্গলবার সকালে শহরের হাসপাতালে লাশ মর্গ থেকে বের করে দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় সেখানকার মানুষদের মধ্যে ক্ষোভ ও শোক দেখা গেছে। শোকাহতরা বলেছেন, ‘গাজায় কোনও নিরাপদ জায়গা নেই’।
খান ইউনিসের জনবহুল আমল এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে বিমান হামলায় প্রায় ২০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, সোমবার যুদ্ধের সবচেয়ে মারাত্মক ২৪ ঘন্টা ছিল। ৭০৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৩০৫ জন শিশু, ১৭৩ জন নারী এবং ৭৮ জন বয়স্ক মানুষ ছিলেন।
ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) মঙ্গলবার সকালে বলেছে, তাদের যুদ্ধবিমানগুলো গাজা এবং এর আশেপাশে উত্তরের কয়েকটি অঞ্চলে কয়েক ডজন সন্ত্রাসী অবকাঠামো এবং হামাসের ঘাঁটিতে হামলা করেছে। ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলরেখার কাছে হামাসের সুড়ঙ্গও ধ্বংস করেছে।
আইডিএফ আরও জানায়, হামলার সময় হামাসের কমান্ড সেন্টার, মসজিদে অবস্থিত হামাসের আস্তানা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। পাশপাশি হামাসের সামরিক শাখার তিন ব্যাটালিয়নের উপ কমান্ডারকে হত্যা করা হয়েছে এবং ইসরায়েলের দিকে রকেট ছোড়ার প্রস্তুতির সময় কয়েক ডজন হামাস যোদ্ধার ওপর হামলা করা হয়েছে।
ইসরায়েল হামাসকে সম্পূর্ণ নির্মূল করে ফেলতে চায় বলে জানিয়েছে আইডিএফ এর চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি।